ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম। Drip Irrigation System.

ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম কি? Drip Irrigation System
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম আশানুরুপ ফসল উৎপাদনে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও পুষ্টি উপাদান যথাযথ মাত্রায় সরবরাহ করার সবচেয়ে কার্যকর পানি সেচ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ফোঁটায়, ফোঁটায় পানি সঠিক পরিমাণে ও সঠিক সময়ে ঠিক গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা হয়, ফলে সময়মতো গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হয়, এতে অধিক ফলন নিশ্চিত করা করা যায়। এই পদ্ধতিতে কৃষক অল্প সময়ে সার, শ্রমিকের মজুরি ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে অধিক ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম কিভাবে কাজ করে?
পাইপ বা ড্রিপ লাইনে সংযুক্ত ছোট ছোট ড্রিপার নজেলের মাধ্যমে পানি সমস্ত বাগানের গাছের গোড়ায়, গোড়ায় সরবরাহ করা হয়। এক-একটি ড্রিপার সম-পরিমাণ পানি ফোঁটায়, ফোঁটায় সমভাবে বাগানের সব গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করার ফলে বাগানের সকল গাছ সমানভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পায় এবং অধিক ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়।
প্রচলিত অন্যান্য সেচ ব্যবস্থার তুলনায় ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম কেন অধিক কার্যকরী?
প্রচলিত সেচ ব্যবস্থায় অনেক ধরনের অসুবিধা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য: এতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ঢালাওভাবে প্রয়োগ করার কারনে গাছের আশে-পাশে অতিরিক্ত মাটি ভেজা থাকে; গাছ অল্প সময়ে এতো পরিমাণ পানি গ্রহনে সক্ষম নয় বিধায় সূর্যের তাপে দ্রুত গতিতে অতিরিক্ত পানি বাস্পিভবনের মাধ্যমে অপচয় হয়। গাছ পানির মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমূহ গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ফসলের আশানুরুপ ফলন বাধাগ্রস্থ হয়, একই সাথে প্রচলিত সেচ ব্যবস্থায় পানি সেচ বাবদ শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ খরচ ও মূল্যবান সময়ের অপচয় হয়। পক্ষান্তরে ড্রিপ ইরিগেশান পানি সেচ ব্যবস্থায় নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন:
(১) এ পদ্ধতিতে পরিকল্পিত ভাবে পানি সরাসরি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করার ফলে সার ও পুষ্টি উপাদানের
অপচয় একেবারে হয়না বললেই চলে।
(২) কৃষি কাজে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ, পানি সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা যায়।
(৩) সেচের পানি বাগানের সব গাছের গোড়ায় সমানহারে পৌঁছানোর জন্য জমি সমতল করার প্রয়োজন
হয়না।
(৪) আঁকা–বাঁকা বা যেকোনো আকৃতির বাগান বা জমিতে সহজেই ও সুষমভাবে সেচ প্রদান করা যায়।
(৫) পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অ–নিরাপদ পানিও এ পদ্ধতিতে সেচ কাজে ব্যবহার করা যায়।
(৬) পানি সরাসরি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করার ফলে শিকড়ের চারপাশে সবসময় আর্দ্রতা বজায় থাকে,
এর ফলে কোনো কারনে সময়মতো সেচ দেওয়া না হলেও পানির অভাবে গাছের ক্ষতি হয়না।
(৭) বালু মাটি বা অতি শুষ্ক মাটি হলেও মাটির ধরনের ভিন্নতার কারনে ঘন, ঘন সেচ প্রয়োগের প্রয়োজন
হয়না।
(৮) বাগানের মাটির ক্ষয় একেবারেই কম হয়।
(৯) জমিতে আগাছা বৃদ্ধি কম হয়।
(১০) নজেলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রতিটি গাছের গোড়ার পানির বিতরণ অত্যন্ত সুষমভাবে সম্পন্ন হয়।(১১) অন্যান্য সেচ পদ্ধতির তুলনায় শ্রমিকের মজুরি কম ব্যয় হয়।
(১২) পানি সরবরাহের ভিন্নতা ভাল্ব এবং ড্রিপার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(১৩) এ পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করার জন্য আলাদা ইউনিট সংযুক্ত করা যায়, যার মাধ্যমে সার প্রয়োগ করা
হলে সারের অপচয় একেবারেই হয়না।
(১৪) মাটির পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখে, যার ফলে ফসলের রোগের ঝুকি হৃাস পায়।
(১৫) সাধারণত অন্যান্য সেচের তুলনায় নিম্নচাপে চালিত হয়, তাই শক্তির ব্যয় কম হয়।
(১৬) নির্ধারিত সময়ে অটোমেটিক ভাবে সেচ প্রয়োগের জন্য আলাদা ইউনিট সংযুক্ত করা যায় যাতে
কোনো মানুষের হাতের সাহায্য ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে অটোমেটিক ভাবেই এই সেচ ব্যবস্থা চালু হয়ে
যায়।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম-এর জন্য কি কি উপকরণ ব্যবহার হয়?
- ড্রিপার নজেল: ঘন্টায় ২-৮ লিটার পর্যন্ত পানি ছিটাতে সক্ষম
- পাইপ বা ড্রিপ-লাইন বা লেটারেল পাইপ, ডায়া: ১৬ মিমি
- ড্রিপার এক্সটেনশান বা ফিডার পাইপ, ডায়া: ৪/৭ মিমি
- বিভিন্ন ধরনের ফিটিংস:
- কানেক্টার, সাইজ: ৪ মিমি; জয়েনার, সাইজ: ১৬ মিমি; এলবো, সাইজ: ১৬ মিমি; টি, সাইজ: ১৬ মিমি; ইন্ড ক্যাপ বা ইন্ড স্টপার, সাইজ: ১৬ মিমি; ড্রিপার স্টেক বা খুঁটি, সাইজ – ৬ ইঞ্চি;
- মিনি কন্ট্রোল ভাল্ব, সাইজ: ১৬ মিমি ও ৪ মিমি; বাইপাস ভাল্ব বা ম্যাক্সি ভাল্ব, সাইজ – ১৬ মিমি।
- ফিল্টার, সাইজ: ১-ইঞ্চি, ২-ইঞ্চি
- তরল সার বা কীটনাশক প্রয়োগের জন্য, ভেঞ্চুরি ইনজেকটার, সাইজ: ৩/৪-ইঞ্চি, ১-ইঞ্চি, ২-ইঞ্চি
- অটো টাইমার ইত্যাদি।
ড্রিপার ও ড্রিপলাইন কয় ধরনের হয়?
ড্রিপার ও ড্রিপলাইন দুই ধরনের হয়ে থাকে: (১) অনলাইন ও (২) ইনলাইন।
অনলাইন পাইপ বা ড্রিপলাইনে ড্রিলিং-পাঞ্চিং টুলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাপের ছিদ্র করে ৪ মিমি সাইজের কানেক্টার ও ৪/৭ মিমি সাইজের ড্রিপার এক্সটেনশান বা ফিডার পাইপের মাধ্যমে ড্রিপার সংযুক্ত করা হয়। এই পাইপে গাছের দুরত্ব অনুসারে প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট স্থানে ছিদ্র করে ৪ মিমি কানেক্টার ও ৪/৭ মিমি পাইপ ব্যবহার করে আলাদা ড্রিপার সংযুক্ত করতে হয়। পরবর্তীতে গাছের দুরত্ব অনুযায়ী ৪/৭ মিমি সাইজের ড্রিপার এক্সটেনশান বা ফিডার পাইপের দৈর্ঘ্য কম-বেশি করে ড্রিপারের স্থান পরিবর্তন করে কাছে বা দুরে স্থাপন করা যায়।
পক্ষান্তরে, ইনলাইন ড্রিপ ইরিগেশান পাইপের ভিতরে নির্দিষ্ট দুরত্ব (যেমন: ৩০ সেমি বা ৪০ সেমি) অন্তর-অন্তর ড্রিপার সেট করা থাকে, তাই এই পাইপে আলাদা ছিদ্র করার বা ড্রিপার সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয়না। ফসলের ধরন বা প্রজাতি ও গাছ থেকে গাছের দুরত্ব অনুযায়ী ইনলাইন ড্রিপ ইরিগেশান পাইপ নির্বাচন ও সেটআপ করতে হয়। ইনলাইন ড্রিপ ইরিগেশান পাইপ সেটআপ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ ও কম ঝামেলাপূর্ণ।
উভয় পদ্ধতির ড্রিপ ইরেগেশান পাইপ মাটির উপরে বা নীচে স্থাপন করা যায়। ফসল সংগ্রহের পর জমিতে চাষ দেওয়ার প্রয়োজন হলে সম্পূর্ণরপে স্থানান্তর করা যায়, এবং পুনরায় সেটআপ করা যায়। মালচিং পেপারের সাথে সুবিধাজনক ভাবে ব্যবহার করা যায়।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম চালাতে পানির পাম্প বা মোটর প্রয়োজন হয় কি না?
সাধারনত ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম Gravity Feed বা মাধ্যাকর্ষণ বলের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার উৎস বা পাত্র থেকে কোনো ধরনের মোটর বা পাম্প ছাড়াই পানি পাইপের মাধ্যমে উচু থেকে নিচে প্রবাহিত হয়ে ড্রিপার নজেলের মাধ্যমে সেচ কাজ সম্পন্ন হয়। তবে জমি বা বাগানের পরিমাপ, গাছ ও ড্রিপারের সংখ্যা বেশি হলে পানির পাম্প বা মোটর প্রয়োজন হতে পারে।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম সেটআপ করার খরচ কেমন?
বাগান বা জমির পরিমাপ, মোট গাছের সংখ্যা, মোট লাইনের সংখ্যা এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ইত্যাদি বিষয়ের উপর ড্রিপ ইরিগেশান পদ্ধতি সেটআপ করার খরচ নির্ভর করে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, ড্রিপ ইরিগেশান সেচ পদ্ধতি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন একটি সেচ পদ্ধতি যা এখনো আমাদের দেশের কৃষির সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষের কাছেই পরিচিত নয়। তাছাড়াও এই পদ্ধতির খরচ ও অন্যান্য কারণে এটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে এখনো যথেষ্ট চাহিদা সম্পন্ন পণ্য বা সেবা নয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের স্বনামধন্য কোন কোম্পানীই ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য উপযুক্ত ও যথাযথ গুণ-মান সম্পন্ন মালামাল (ড্রিপার বা পাইপ ফিটিংস, ইত্যাদি) উৎপাদন শুরু করেনি। ফলে ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য উপযুক্ত ড্রিপার, পাইপ ফিটিংস, ইত্যাদি মালামাল সমূহের প্রায় শতভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে, এমনকি বিশ্বের অনেক দেশেই, ড্রিপ ইরিগেশান সিস্টেম সেটআপ করা অন্যান্য সেচ ব্যবস্থার তুলনায় কিছুটা ব্যয়বহুল অর্থাৎ এই সেচ পদ্ধতি সস্তায় সেটআপ করা যায় না।
ড্রিপ ইরিগেশান সিস্টেম সস্তা না হওয়ার অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো – সর্বোত্তম পানি সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে এটির ব্যপক ও বিভিন্নমুখি উপকারিতা। কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী পানির পরিমিত ব্যবহার ও সংরক্ষনে ড্রিপ ইরিগেশান সিস্টেম যথাযথ কার্যকরী সেচ পদ্ধতি, তাই এটি পরিবেশ বান্ধব। তাছাড়াও সময়, শ্রম ও ব্যয় সাশ্রয়, দীর্ঘ মেয়াদে এর ব্যবহার উপযোগিতা এবং আরো অন্যান্য সুবিধার কারণে সর্বোপরি এটি একটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক সেচ পদ্ধতি।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম সেটআপ করার প্রাথমিক খরচ একবারই করতে হয়, এবং এই পদ্ধতি একবার সেটআপ করলে সাধারনত: ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তাই এ পদ্ধতির দীর্ঘস্থায়িত্ব, ফসলের অধিকতর ফলন ও নানাবিধ সুফল বিবেচনা করলে এক কথায় বলা যায় এটি একটি টেকসই, সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী উন্নত সেচ পদ্ধতি।
ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম সেটআপ করতে কি ধরনের মালামাল ব্যবহার করা হয়?
ড্রিপ ইরিগেশান সেচ পদ্ধতি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন একটি সেচ পদ্ধতি যা এখনো আমাদের দেশের কৃষির সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষের কাছেই পরিচিত নয়। তাছাড়াও এই পদ্ধতির খরচ ও অন্যান্য কারণে এটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে এখনো যথেষ্ট চাহিদা সম্পন্ন পণ্য বা সেবা নয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের স্বনামধন্য কোন কোম্পানীই ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য উপযুক্ত ও যথাযথ গুণ-মান সম্পন্ন মালামাল (ড্রিপার বা পাইপ ফিটিংস, ইত্যাদি) উৎপাদন শুরু করেনি। ফলে ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য উপযুক্ত ড্রিপার, পাইপ ফিটিংস, ইত্যাদি মালামাল সমূহের প্রায় শতভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
তাই সঠিক পদ্ধতিতে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী ড্রিপ ইরিগেশান সিস্টেম সেটআপ করতে বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ড্রিপার, পাইপ, ফিটিংস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ড্রিপ ইরিগেশান সিস্টেমের বিভিন্নমুখি উপকারিতা পেতে হলে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত যথাযথ উন্নতমানের মালামাল, পাইপ, ফিটিংস ব্যবহার করা আবশ্যক হয়ে পড়ে, যা কখনো সস্তায় ক্রয় করা যায়না, এবং চিরাচরিত নিয়মে দুনিয়ার কোনো বাজারেই গুণগত মানের পণ্য সস্তায় পাওয়া যায়না।
যেকোন আধুনিক প্রযুক্তির কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নিয়ম, কানুন ও মানদণ্ড থাকে যা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। একই ভাবে ড্রিপ ইরিগেশান সেটআপ করার ক্ষেত্রেও কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নিয়ম, কানুন এবং মালামাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড বজায় রাখতে হয়। তা না হলে এই পদ্ধতির পরিপূর্ণ সুফল লাভ করা সম্ভব হয়না।
পাইপ বা ড্রিপ লাইন, ড্রিপ ইরিগেশান সেচ পদ্ধতির মূল উপাদান। টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী ড্রিপ ইরিগেশান সিষ্টেম সেটআপ করতে হলে উন্নত মানের পাইপ বা ড্রিপ লাইন ব্যবহার করতে হয়। কারন পাইপ বা ড্রিপ লাইনের মাধ্যমে ড্রিপারে পানি প্রবাহিত হয়; পাইপ তৈরির উপাদান ও পরিমাপ সঠিক না থাকলে অধিক চাপে পাইপ বা ড্রিপ লাইন ফেটে নষ্ট হয়ে যায় ও ড্রিপারে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়; তাছাড়াও অধিক তাপে পাইপের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সেচের পানি বিষাক্ত হয়ে যায়।
বিভিন্ন উপাদনে তৈরি পাইপের মধ্যে ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য LDPE পাইপ সবচেয়ে উপযুক্ত পাইপ, এই পাইপের বিশেষত্ত্ব:
- শুধু মাত্র ড্রিপ ইরিগেশানের জন্যই উন্নতমানের প্রিমিয়াম গ্রেড LDPE কাঁচামাল দ্বারা বিশেষভাবে তৈরি বিধায় যেকোন পরিবেশ ও আবহাওয়ায় ব্যবহার করা যায় এবং অত্যধিক চাপ ও তাপে বেঁকে যায়না বা ফেটে নষ্ট হয়না। ঝামেলাহীন ভাবে দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়, অধিক টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।
- অত্যধিক তাপে কেমিক্যাল রিয়েকশান হয়ে সেচের পানি বিষাক্ত করেনা যা অন্য সাধারণ পাইপের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। অধিকতর ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে।
- পাইপের সাথে ড্রিপার ও বিভিন্ন ধরনের ফিটিংস ভালোভাবে সংযুক্ত থাকে ফলে ফিটিংস বা ড্রিপারের জোড়া দিয়ে পানি লিক করেনা, সমভাবে পানির প্রবাহ বজায় থাকে।
- উৎপাদনকারী কর্তৃক ঘোষিত পাইপের আকার ও পরিমাপ সঠিকভাবে বজায় থাকে বিধায় সকল প্রকার জোড়া টেকসই ও মজবুত হয় এবং সেটআপ করা সহজ হয়।
- এই পাইপ ঘোষিত মাত্রার পানি সমহারে ও সমভাবে প্রদান করে থাকে, পরিমাণে কম বা বেশি হয়না যা বাগানের সকল গাছের সুষম বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- গুণগতমান বজায় রাখায় ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া সহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই ড্রিপ ইরিগেশানের জন্য একই পাইপ বহুদিন ধরে সুনামের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে।
- বিদেশি সুনামধন্য উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরাসরি আমদানিকৃত যা গুণগত মান সম্পন্ন আসল পাইপের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
ড্রিপ ইরিগেশন সেচ পদ্ধতিতে কি ধরনের ড্রিপার ব্যবহার করা হয়?
ড্রিপ ইরিগেশন সেচ পদ্ধতিতে এমন ড্রিপার ব্যবহার করা হয় যা:
- গাছের ঠিক গোড়ায় ফোঁটায়, ফোঁটায় বা ছোট, ছোট বিন্দু আকারে একটা লম্বা সময় ধরে পানি প্রয়োগ করে থাকে।
- গাছ তার শিকড়ের মাধ্যমে পরিমিত পানি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো একটা লম্বা সময় ধরে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করার সুযোগ পায়।
- মাটির পুষ্টি উপাদানের অপচয় রোধ করে স্বাভাবিকের তুলনায় যেকোন ফসলের ৬০-৭০ ভাগ ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- গাছের গোড়ায় ও চারপাশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি জমা করে না, ফলে আগাছা জন্মানোর সুযোগ পায়না ও পানির অপচয় একেবারেই হয়না।
- কোনো ধরনের পানির পাম্প বা মোটরের প্রয়োজন ছাড়াই পরিচালিত হয়, তাই বিদ্যুৎ, ডিজেল, পেট্রোল ইত্যাদি বাবদ অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই পানি সেচ প্রদান করা যায়।